Nepal Poshupstinath temple detils in bengali

 পশুপতিনাথ মন্দির :

আমি আপনাকে নেপালের প্রসিদ্ধ এবং ঐতিহাসিক **পশুপতিনাথ মন্দির** সম্পর্কে  সুন্দর করে বিস্তারিত জানাচ্ছি।  



পশুপতিনাথ মন্দির : নেপালের অন্যতম প্রাচীন ও পবিত্র শিব মন্দির  


**পশুপতিনাথ মন্দির** নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডু শহরের বাগমতী নদীর তীরে অবস্থিত। এটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি অত্যন্ত পবিত্র স্থান এবং ভগবান শিবের অন্যতম প্রধান উপাসনাকেন্দ্র। মন্দিরটি ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত এবং নেপালের সবচেয়ে পুরাতন ও বিখ্যাত মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি।


 ইতিহাস ও স্থাপত্যশৈলী


মন্দিরটির ইতিহাস প্রায় ১৫০০ বছরের পুরনো। জনশ্রুতি অনুসারে, প্রথম পশুপতিনাথ মন্দিরটি কাঠের তৈরি ছিল এবং ৫ম বা ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। পরে ১৭শ শতাব্দীতে বর্তমান পাথর ও কাঠের সংমিশ্রণে তৈরি এই মন্দিরটি গড়ে তোলা হয়।  


পশুপতিনাথ মন্দিরটি দুই তলা বিশিষ্ট স্বর্ণমন্ডিত ছাদ, রূপার দরজা এবং সূক্ষ্ম কাঠের খোদাই করা শিল্পকর্ম দ্বারা সজ্জিত। মন্দিরের মূল গর্ভগৃহে চারমুখো শিবলিঙ্গ অবস্থিত। এই শিবলিঙ্গের চারটি মুখ চারটি দিকে স্থাপিত এবং চারটি নাম রয়েছে — তাতপুরুষ, অঘোর, বামদেব ও সদ্যোজাত।  


 ধর্মীয় গুরুত্ব  


পশুপতিনাথ শুধু নেপালেরই নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার হিন্দু ভক্তদের জন্য এক বিশাল তীর্থস্থান। প্রতি বছর **মহাশিবরাত্রি** উপলক্ষে লক্ষাধিক পূণ্যার্থী এখানে সমবেত হন। শিবভক্তরা বিশেষ করে এই দিনে মন্দিরের দর্শন করে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। মহাশিবরাত্রিতে পশুপতিনাথ মন্দির এক অনন্য উৎসবের রূপ ধারণ করে।  


এছাড়া নেপালের রাজাদের অভিষেকের সময় পশুপতিনাথ মন্দিরে পূজা-অর্চনা করার প্রথা ছিল। বিশ্বাস করা হয়, এই মন্দিরের আশীর্বাদ পেলে রাজত্ব সুদৃঢ় হয়।  


 পরিবেশ ও আশপাশ  


মন্দির কমপ্লেক্সের ভেতর ছোট-বড় প্রায় ৫০০টি শিবলিঙ্গ এবং অন্যান্য দেব-দেবীর মন্দির রয়েছে। মন্দির চত্বরে হরিণ পার্ক, বাগমতী নদী এবং ঘাট আছে, যেখানে হিন্দু মতে মৃতদেহ দাহ করা হয়।  


বিশেষ করে গোধূলি লগ্নে বাগমতী নদীর তীরে **আরতি** অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ভক্তিময় পরিবেশ তৈরি করে।  


 ইউনেস্কো ও পর্যটন  


১৯৭৯ সালে এই মন্দিরটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রতিবছর দেশ-বিদেশের বহু পর্যটক এই পবিত্র স্থান দর্শনে আসেন।  


পশুপতিনাথ মন্দির শুধু ধর্মীয় স্থাপত্য নয়, বরং নেপালের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক জীবন্ত সাক্ষী। এটি একাধারে আধ্যাত্মিক, ঐতিহাসিক ও পর্যটন কেন্দ্র।


---



Comments