Energy শক্তি


শক্তি :: 
--কার্য করার সামর্থ্যকে শক্তি বলে।

- শক্তির বিভিন্ন রূপ
শক্তির বিভিন্ন রূপ আছে। যথা—

যান্ত্রিক শক্তি ::
কোনো বস্তুর যান্ত্রিক কার্য করার সামর্থ্যকে তার যান্ত্রিকশক্তি বলে। যান্ত্রিকশক্তি দুপ্রকার—গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তি। গতিশক্তি ও স্থিতিশক্তির মোট পরিমাণ দ্বারা যান্ত্রিকশক্তির পরিমাপ করা হয়।

১ গতিশক্তি : কোনো গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য পায়, তাকে ওই বস্তুর গতিশক্তি বলে।
উদাহরণ : একটি ঢিলকে জানালার কাচে ঠেকিয়ে রাখলে ঢিলটি জানালার কাচ ভেদ করতে পারে না। কিন্তু ঢিলটি ছুড়ে দিলে জানালার কাচ ভেদ করতে পারে, কারণ গতির জন্য ঢিলটি গতিশক্তি পায় এবং তার ফলেই সে কার্য করতে সক্ষম হয়।

2. স্থিতিশক্তি :
: কোনো বস্তু তার স্বাভাবিক অবস্থান বা আকৃতির পরিবর্তনের জন্য কার্য করার যে সামর্থ্য লাভ করে,
তাকে ওই বস্তুর স্থিতিশক্তি বলে।

→ উদাহরণ : উঁচু স্থানে বাঁধ দিয়ে নদীর জল ধরে রাখা হয়, ওই জলে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত থাকে। জল নীচে নামার
সময় এই স্থিতিশক্তি গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। ঘড়িতে দম দিলে ঘড়ির স্প্রিং গুটিয়ে সংকুচিত হয়। ফলে আকৃতিগত পরিবর্তনের জন্য স্প্রিং-এর মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয়। ওই সজ্জিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঘড়ি চলতে শুরু করে, অর্থাৎ কার্য করে। এগুলি স্থিতিশক্তির উদাহরণ।


তাপশক্তি : তাপের সাহায্যে নানারকম কার্য হয়। তাপ দিয়ে জলকে বাষ্পে পরিণত করে ইঞ্জিন চালানো হয়। সুতরাং, তাপ একপ্রকার শক্তি। আবার, ডিজেল ও পেট্রোলের দহনে যে তাপ উৎপন্ন হয়, তার সাহায্যে মোটরগাড়ি ও এরোপ্লেন চালানো হয়।

আলোকশক্তি : আলোকের সাহায্যে অনেক রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটানো যায়। সূর্যের আলোর সাহায্যে গাছ তার সবুজ পাতায় সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরি করে। সুতরাং, আলোক একপ্রকার শক্তি।

শব্দশক্তি : শব্দ যে মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যায় সেই মাধ্যমের কণাগুলিকে আন্দোলিত করে। ফলে তরঙ্গের সৃষ্টি হয় এবং শব্দ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। যুদ্ধের সময় প্রচণ্ড শব্দে বোমা ফেটে যে কম্পন হয় তার ফলে অনেক সময় জানালার কাচ ভেঙে যায়। সেতার, বেহালা প্রভৃতি টান দেওয়া তারের যন্ত্রে তারকে কম্পিত করলে শব্দ উৎপন্ন হয়। এইসব ক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তি শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। তাই শব্দ একপ্রকার শক্তি 



চৌম্বক শক্তি : চৌম্বক ক্ষেত্রে যে শক্তি সম্মিত থাকে, তাকে চৌম্বক শক্তি বলে। চুম্বকের আকর্ষণে লোহা চুম্বকের দিকে আকর্ষিত হয়। সুতরাং, চৌম্বকত্ব একপ্রকার শক্তি।

 তড়িৎশক্তি : তড়িতের সাহায্যে অসংখ্য কাজ করা হয়। তড়িতের সাহায্যে পাখা চলে, আলো জ্বলে, ট্রেন চলে।কলকারখানায় তড়িৎ অপরিহার্য শক্তি। তাই তড়িৎ একপ্রকার শক্তি।

,,,,,,,,,,

রাসায়নিক শক্তি : রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে শক্তি নির্গত হয়, তাকে রাসায়নিক শক্তি বলে। কয়লা, পেট্রোল প্রভৃতি পোড়ালে যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে তার ফলে তাপ ও আলোকশক্তি পাওয়া যায়। ব্যাটারিতে রাসায়নিক ক্রিয়ার ফলে তড়িৎশক্তি পাওয়া যায়।


 পারমাণবিক শক্তি : ইউরেনিয়াম, প্লুটোনিয়াম প্রভৃতি ভারী মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসকে নিউট্রনের আঘাতে বিভাজিত করলে যে নতুন মৌল তৈরি হয়, তাদের এর আগের মৌলের চেয়ে কিছু কম হয়। এই হ্রাসপ্রাপ্ত ভর E=MC^2ঐ সূত্রানুযায়ী শক্তিতে রুপান্তরিত হয়। এই শক্তিকে বলা হয় পারমাণবিক শক্তি। বর্তমানে পারমাণবিক শক্তির
সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।

শক্তির রূপান্তর ::
শক্তি এক রূপ থেকে অন্য রুপে রুপান্তরিত হতে পারে।
 উদাহরণ : স্টিম ইঞ্জিনে কয়লা পুড়িয়ে স্টিম তৈরি করা হয় এবং সেই স্টিমে ইঞ্জিন চলে। এক্ষেত্রে প্রথমে কয়লা পুড়িয়ে রাসায়নিক শক্তিকে তাপশক্তিতে রূপান্তর করা হয়। তারপর উৎপন্ন তাপশক্তি যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

 স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তির পারস্পরিক রূপান্তর::
স্থিতিশক্তির গতিশক্তিতে রূপান্তর : ভূপৃষ্ঠ থেকে কোনো উঁচু স্থানে কোনো বস্তু থাকলে তার সব শক্তি স্থিতিশক্তি রূপে সজ্জিত থাকে। এবার, ওই বস্তুকে নীচের দিকে ফেললে বস্তুটির স্থিতিশক্তি ক্রমশ কমতে এবং বেগ ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷অর্থাৎ, বস্তুটির স্থিতিশক্তি ক্রমশ গতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে। মাটি স্পর্শ করার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বস্তুর স্থিতিশক্তি শূন্য এবং গতিশক্তি সর্বোচ্চ হয়।

,,,,,,,,,,,,,,,,,,


গতিশক্তির স্থিতিশক্তিতে রূপান্তর : একটি বস্তুকে ভূপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে ছুড়ে দিলে ছোড়ার মুহূর্তে বস্তুর শুধু গতিশক্তি থাকে কিন্তু স্থিতিশক্তি থাকে না। বস্তুটি যত ওপরে ওঠে তত তার গতিশক্তি কমে এবং তা স্থিতিশক্তিতে রূপান্তরিত হতে থাকে। সর্বোচ্চ অবস্থানে বস্তুর গতিশক্তি শূন্য এবং স্থিতিশক্তি সর্বোচ্চ হয়।


আকৃতি পরিবর্তনজনিত স্থিতিশক্তির সঞ্চয় :: 
স্বাভাবিক আকারে ধনুক থাকলে তার থেকে তির ছোড়া যায় না। ধনুকের ছিলাকে টেনে ধরলে তার স্বাভাবিক আকৃতির পরিবর্তনের ফলে তার মধ্যে স্থিতিশক্তি সঞ্চিত হয়, ফলে ধনুকটি কার্য করতে পারে অর্থাৎ ধনুক থেকে তির ছোড়া যায় ৷

 শক্তির সংরক্ষণ সূত্র বা নিত্যতা সূত্র :: 
শক্তি অবিনশ্বর, শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না। শক্তিকে কেবল এক রূপ থেকে অন্য এক বা একাধিক রূপে রূপান্তরিত করা যায়। বিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ ধ্রুবক।

* উদাহরণ : একটি বস্তুকে কোনো উঁচু স্থান থেকে বিনা বাধায় নীচের দিকে ফেললে যে-কোনো অবস্থানেই তার যান্ত্রিক শক্তির মান (গতিশক্তি + স্থিতিশক্তি) ধ্রুবক থাকে। প্রথম অবস্থানে বস্তুটির সমস্ত শক্তিই হল স্থিতিশক্তি। বস্তুটি
যত নীচের দিকে নামে তার স্থিতিশক্তি কমে, গতিশক্তি বাড়ে। কিন্তু যে-কোনো অবস্থানে বস্তুটির স্থিতিশক্তি ও গতিশক্তির যোগফল প্রাথমিক স্থিতিশক্তির সমান থাকে। মাটি স্পর্শ করার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে তার সব শক্তি গতিশক্তি, কিন্তু এই গতিশক্তির মানও প্রাথমিক স্থিতিশক্তির সমান। মাটি স্পর্শ করলে বস্তুটির সমস্ত শক্তিই শব্দশক্তি ও তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সুতরাং, মোট শক্তি সবসময় একই থাকে।
,,,,,,,,,,,,
শক্তির রূপান্তর::
শক্তি এক রূপ থেকে অন্য এক বা একাধিক রূপে পরিবর্তিত হতে পারে। শক্তির এই রূপ পরিবর্তনকে শক্তির রূপান্তর বলে ।


- শক্তির রূপান্তরের উদাহরণ ::

(i) যান্ত্রিক শক্তি থেকে অন্য শক্তিতে রূপান্তর

1. যান্ত্রিক শক্তি থেকে তাপশক্তি ::
(i) হাতে হাত ঘষলে হাতের তালু গরম হয় ।
(ii) তুরপুন দিয়ে লোহায় ছিদ্র করলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় ।

2. যান্ত্রিক শক্তি থেকে শব্দশক্তি::
সেতার, বেহালা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রে যান্ত্রিক শক্তি শব্দশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

3. যান্ত্রিক শক্তি থেকে তাপ ও আলোকশক্তি :: 
ছুরি, কাঁচি প্রভৃতি যন্ত্রে শান দেবার সময় আগুনের ফুলকি বের হয়ে বস্তুগুলি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তি তাপ ও আলোকশক্তিতে রূপান্তরিত হয়।

4.যান্ত্রিক শক্তি থেকে তড়িৎশক্তি::

(i) ডায়নামো ঘোরার ফলে ডায়নামোর যান্ত্রিক শক্তি তড়িৎশক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।

(ii) জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করার সময় জলের স্থিতিশক্তি তথা যান্ত্রিক শক্তিকে ডায়নামোর মাধ্যমে তড়িৎশক্তিতে রূপান্তর করা হয়।

5.যান্ত্রিক শক্তি থেকে রাসায়নিক শক্তি ও তাপশক্তিতে ::
দেশলাই বাক্সের বারুদে দেশলাই কাঠি ঘষলে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং আগুন জ্বলে ওঠে। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক শক্তি রাসায়নিক শক্তি ও তাপশক্তিতে রুপান্তরিত হয় ।

Comments